আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, বাজারে প্যাকেটজাত খাবারের দাম এত কম কেন, অথচ খাঁটি এবং প্রাকৃতিক খাবারের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি? এর পেছনে লুকিয়ে আছে এক বিশাল ব্যবসায়িক চক্র, যা আপনার স্বাস্থ্যকে পুঁজি করে লাভবান হচ্ছে। চলুন, এই মারাত্মক ফাঁদটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সস্তার তিন অবস্থা: কেন এসব খাবার এত সহজলভ্য?
সয়াবিন তেল, সাদা চিনি, পলিশ করা চাল বা ময়দার মতো খাবারগুলো আমাদের চারপাশে ছেয়ে গেছে। এগুলো এত সস্তা হওয়ার কারণ হলো, এগুলো বিশাল পরিমাণে কারখানায় উৎপাদন করা হয়, যা পরিবহন এবং গুদামজাত করাও খুব সহজ। এর সাথে প্রায়ই যুক্ত হয় সরকারি ভর্তুকি এবং বড় বড় কোম্পানির লবিং, যা এমনভাবে খাদ্য নীতিকে প্রভাবিত করে যাতে এই প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোই বাজার দখল করে রাখে।
আজকের সস্তা খাবার, আগামীকালের দামী রোগ
এই সহজলভ্য খাবারগুলো খেতে খেতে আমাদের শরীর ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এগুলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, হরমোনের সমস্যা এবং ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি তৈরি করে।
আর ঠিক এখানেই শুরু হয় আসল খেলা! যখন আপনি এই সস্তা খাবারগুলো খেয়ে অসুস্থ হন, তখন আপনাকে যেতে হয় সেই হেলথকেয়ার ইন্ডাস্ট্রির কাছে। এরপর চিকিৎসা, ওষুধ, ল্যাব টেস্ট এবং সার্জারির মাধ্যমে তারা আপনার অসুস্থতা থেকে লাভ করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য রোগ সারিয়ে তোলা নয়, বরং রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, যাতে আপনি সারাজীবন তাদের গ্রাহক হয়ে থাকেন।
একই পকেটে খাবারের ব্যবসা আর ওষুধের ব্যবসা!
অবাক করার মতো বিষয় হলো, যে কর্পোরেশনগুলো আপনাকে অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করছে, তারাই আবার আপনার অসুস্থতার জন্য ওষুধ এবং চিকিৎসাসেবাও বিক্রি করছে। আমাদের দেশের বড় বড় কর্পোরেট গ্রুপ থেকে শুরু করে বিশ্বের নামকরা কোম্পানিগুলো পর্যন্ত একই সাথে খাবার, ওষুধ এবং হাসপাতাল—এই তিনটি ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করে রেখেছে।
এক কথায়, তাদের একটি বিভাগ আপনাকে সস্তা খাবার দিয়ে অসুস্থ বানাচ্ছে, আর অন্য বিভাগটি সেই অসুস্থতার চিকিৎসা করে লাভবান হচ্ছে।
কীভাবে ভাঙবেন এই বিপজ্জনক চক্র?
এই চক্র থেকে বেরোনোর পথ আপনার নিজের হাতেই। এর জন্য দরকার সচেতনতা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস। আপনাকে সস্তা, প্যাকেটজাত খাবারের প্রলোভন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এর বদলে বেছে নিন স্থানীয়, ঐতিহ্যবাহী, এবং অপ্রক্রিয়াজাত পুষ্টিকর খাবার। যেমন—ঘানির তেল, লাল চাল, লাল আটা, গুড়, তাজা শাকসবজি ও ফলমূল। কর্পোরেট লাভের এই বিপজ্জনক ফাঁদ থেকে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে বাঁচানোর জন্য এটাই আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ।