যদি আপনাকে বলা হয়, আপনার বহুদিনের পুরোনো ব্যথা, অ্যাসিডিটি, অ্যাজমা বা উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের মূল কারণ কোনো জটিল অসুখ নয়, বরং শুধুমাত্র পর্যাপ্ত পানির অভাব? এমনই এক যুগান্তকারী তত্ত্বের কথা বলেছেন ডা. ফেরেদুন ব্যাটম্যানঘেলিজ, যিনি ছিলেন পেনিসিলিনের আবিষ্কারক স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিংয়েরই একজন ছাত্র। চলুন, জেনে নেওয়া যাক তাঁর সেই অবিশ্বাস্য আবিষ্কারের গল্প।
জেলের ভেতরে এক অবিশ্বাস্য চিকিৎসা
ডা. ব্যাটম্যানঘেলিজের জীবনের মোড় ঘুরে যায় যখন তিনি ইরানের এক জেলে বন্দি ছিলেন। সেখানে তিনি শুধুমাত্র পানি পান করিয়ে ৩,০০০-এরও বেশি পেপটিক আলসারের রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলেন!
তিনি একটি ঘটনার কথা বলেন, যেখানে এক বন্দি আলসারের যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। দামি ঔষধ খেয়েও তার ব্যথা কমেনি। ডা. ব্যাটম্যানঘেলিজ তাকে শুধু কয়েক গ্লাস পানি পান করান এবং আশ্চর্যজনকভাবে, মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার অসহ্য যন্ত্রণা পুরোপুরি সেরে যায়! এই ঘটনা তাকে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করে যে, চিকিৎসা বিজ্ঞান হয়তো বড় কোনো ভুল করছে।
হিস্টামিনের অজানা রহস্য
ডা. ব্যাটম্যানঘেলিজ আবিষ্কার করেন যে, হিস্টামিন শুধু ব্যথার উদ্রেককারী এক রাসায়নিক নয়, এটি আমাদের মস্তিষ্কের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তাবাহক যা শরীরে পানির ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করে। যখন শরীরের কোনো অংশে পানির অভাব হয়, তখন হিস্টামিন সেখানে ব্যথা তৈরি করে জানান দেয় যে, ঐ স্থানে পানি প্রয়োজন। তাঁর মতে, এই সহজ সত্যটি মেডিকেল পাঠ্যপুস্তক থেকে záměrněই আড়াল করে রাখা হয়েছে।
কেন ঔষধের বদলে পানি?
ডা. ব্যাটম্যানঘেলিজের মতে, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি চায় না যে মানুষ এই সত্যটি জানুক। কারণ পানি একটি বিনামূল্যের ঔষধ, যা থেকে তারা কোনো লাভ করতে পারবে না। তাই তারা পানিশূন্যতার কারণে সৃষ্ট ব্যথা বা রোগগুলোকে অ্যান্টিহিস্টামিন এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে চিকিৎসা করে, যা সমস্যার মূল কারণকে কখনোই সমাধান করে না। তাঁর মতে, "আপনি অসুস্থ নন, আপনি কেবল তৃষ্ণার্ত!"
আপনিও কি অজান্তেই পানিশূন্যতায় ভুগছেন?
আমাদের মস্তিষ্ক, ফুসফুস, রক্ত এমনকি হাড়েরও বড় একটি অংশ পানি দিয়ে তৈরি। আমরা প্রতিদিন শ্বাস-প্রশ্বাস, ঘাম এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রায় ৩-৪ লিটার পানি হারাই। এই ঘাটতি পূরণ না হলেই শুরু হয় ‘অনিচ্ছাকৃত দীর্ঘস্থায়ী পানিশূন্যতা’ (Unintentional Chronic Dehydration), যা থেকেই জন্ম নেয় অধিকাংশ রোগ।
কীভাবে বুঝবেন আপনি পানিশূন্যতায় ভুগছেন?
তৃষ্ণা পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না, কারণ তৃষ্ণা হলো পানিশূন্যতার চূড়ান্ত লক্ষণ। এর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো প্রস্রাবের রঙ পর্যবেক্ষণ করা:
- স্বচ্ছ বা বর্ণহীন: শরীর পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে।
- হালকা হলুদ: শরীরে পানির ঘাটতি শুরু হয়েছে।
- কমলা বা গাঢ় রঙ: শরীর মারাত্মক পানিশূন্যতায় ভুগছে।
সঠিকভাবে পানি পানের নিয়ম:
চা, কফি বা কোমল পানীয় শরীর থেকে উল্টো পানি বের করে দেয়। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং খাবার খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে ও এক ঘণ্টা পরে পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন। তৃষ্ণার্ত হওয়ার আগেই সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে পানি পান করতে থাকুন।