বনের পশু-পাখিরা बिना ডাক্তার বা ঔষধেই সুস্থভাবে বেঁচে থাকে, অথচ সভ্য মানুষ আজ নানা জটিল রোগে জর্জরিত। ষাট পেরোনোর আগেই আমাদের শরীর জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। এর পেছনের কারণ এবং প্রাকৃতিক নিরাময়ের পথ সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আপনার শরীরের শত্রু: অম্লীয় বা অ্যাসিডিক পরিবেশ
প্রাকৃতিক নিরাময়ের দর্শন অনুযায়ী, মানবদেহ যখন ক্ষারীয় (Alkaline) থাকে, তখন সে সুস্থ থাকে। কিন্তু যখনই নানাবিধ কারণে শরীর অম্লীয় (Acidic) হয়ে পড়ে, তখনই রোগ-জীবাণু সংক্রমণের সুযোগ পায় এবং আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।
শরীর অম্লীয় বা অ্যাসিডিক হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো:-
- বিষাক্ত খাদ্যাভ্যাস: প্রসেসড ফুড, জাংকফুড, রিফাইন্ড খাবার এবং রাসায়নিকযুক্ত পানীয় শরীরে বিষের মাত্রা বাড়ায়।
- ত্বকের মাধ্যমে বিষ গ্রহণ: ডিওডোরেন্ট, পারফিউম, কসমেটিকস, শ্যাম্পু, টুথপেস্টের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকেও মারাত্মক বিষাক্ত উপাদান আমাদের ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
- মানসিক চাপ: দুশ্চিন্তা, অসুস্থ চিন্তা এবং মানসিক চাপ শরীরকে ভেতর থেকে অম্লীয় করে তোলে।
- আধুনিক জীবনযাত্রা: অপর্যাপ্ত ঘুম, পানিশূন্যতা এবং মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে নির্গত ব্লু-লাইট আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।
মাথাব্যথা বা জ্বর কি আসলেই রোগ?
যখন অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে শরীরে বিষের পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে যায় এবং দেহের টক্সিন বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা আর পেরে ওঠে না, তখনই মাথাব্যথা, জ্বর, সর্দি-কাশি বা পেট ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
এগুলো আসলে কোনো রোগ নয়, বরং শরীরের পক্ষ থেকে পাঠানো এক একটি সতর্কবার্তা। শরীর আপনাকে জানান দিচ্ছে যে, ভেতরের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে এবং একে পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
ঔষধের ফাঁদ: উপশম নাকি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি?
এই সতর্কবার্তা বা উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্রই আমরা ডাক্তার বা ফার্মেসিতে ছুটে যাই এবং ঔষধ খেয়ে সেটিকে দমন (Suppress) করার চেষ্টা করি। কিন্তু এটি একটি মারাত্মক ভুল। ঔষধ হয়তো সাময়িকভাবে আপনাকে উপসর্গ থেকে মুক্তি দেয়, কিন্তু এটি সমস্যার মূল কারণকে সমাধান করে না।
উল্টো, এই রাসায়নিক ঔষধগুলো শরীরে "ড্রাগ পয়জনিং" তৈরি করে এবং দেহের প্রাকৃতিক নিরাময় প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে সাময়িক উপশম মিললেও, দীর্ঘমেয়াদে শরীর আরও বড় ও জটিল রোগের দিকে এগিয়ে যায়।
ফিরে চলুন প্রকৃতির পথে
প্রাকৃতিক নিরাময়ের দর্শন অনুযায়ী, বিলিয়ন বিলিয়ন টাকার ঔষধ শিল্পের কারণেই সাধারণ এবং বিনামূল্যে পাওয়া নিরাময়ের পথগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরা হয় না। অথচ এর সমাধান খুব সহজ।
শরীরের অম্লীয় অবস্থা পরিবর্তন করে ক্ষারীয় অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারলেই দেহ তার নিজস্ব নিরাময় ক্ষমতা ফিরে পায়। এর জন্য প্রয়োজন—
- প্রাকৃতিক ও অপ্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করা।
- পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করা।
- মানসিক চাপমুক্ত থাকা এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো।
- রাসায়নিকযুক্ত প্রসাধনী এড়িয়ে চলা।
বন্যপ্রাণীদের মতো সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন পেতে হলে আমাদেরকেও প্রকৃতির মূল নীতির দিকেই ফিরে যেতে হবে। উপসর্গ দমন না করে, রোগের মূল কারণ দূর করার মাধ্যমেই প্রকৃত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।
A simple graphic of a pH scale, with the alkaline side green ("Health") and acidic side red ("Sickness").
A person choosing a path towards nature over a path towards a city with factories.