মাঠে-ঘাটে বা জঙ্গলে অযত্নে আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা এক অতি সাধারণ শাক, যার নাম ঘাটকোল। কিন্তু এই সাধারণ শাকটির অসাধারণ গুণাবলী সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। গ্রামবাংলার মানুষ যুগ যুগ ধরে এটিকে শুধু খাবার হিসেবেই নয়, বিভিন্ন রোগের প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবেও ব্যবহার করে আসছে।
পুষ্টির এক বিস্ময়কর ভান্ডার
ঘাটকোল বা ঘেঁটুকচু পুষ্টির এক দারুণ উৎস। এর ডাঁটা ও পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ (ক্যারোটিন), বি, সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন। এছাড়া এতে থাকা স্যাপোনিনস, টেনিনস ও ফ্লাভোনয়েডের মতো খনিজ উপাদান উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
স্বাদে ও ঐতিহ্যে ঘাটকোল
ঘাটকোলের ব্যবহার বাংলার রান্নাঘরে খুবই বৈচিত্র্যময়। এটি দিয়ে সুস্বাদু ভর্তা, ভাজি, ভুনা এমনকি বড় মাছের তরকারিও রান্না করা হয়। খুদের ভাতের সাথে ঘাটকোলের ভর্তা এক অতি জনপ্রিয় গ্রামীণ খাবার। পার্বত্য চট্টগ্রামে এটিকে শুঁটকি মাছ দিয়ে রান্না করা হয়, আবার সাতক্ষীরার দিকে নারকেল মিশিয়ে এর স্বাদ আরও বাড়িয়ে তোলা হয়।
যে রোগগুলোর বিরুদ্ধে লড়ে ঘাটকোল
এই সাধারণ শাকটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এক কথায় অসাধারণ।
- জ্বর ও অরুচি: জ্বরের পর মুখের রুচি ফেরাতে এবং শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে ঘাটকোলের ভর্তা খুবই কার্যকর।
- সর্দি-কাশি ও টনসিল: টনসিলের ব্যথা, গলার অ্যালার্জি এবং সর্দি-কাশির সমস্যায় এটি দারুণ উপকারী।
- রক্তশূন্যতা: ঘাটকোলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় এটি নিয়মিত খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।
- কোলন ক্যান্সার ও রাতকানা: নিয়মিত ঘাটকোল খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে এবং ভিটামিন 'এ'-এর প্রাচুর্যের কারণে রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ: এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
খাওয়ার আগে যে দুটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন
ঘাটকোল খাওয়ার আগে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা দরকার।
- গলা চুলকানি: এতে ক্যালসিয়াম অক্সালেটের উপস্থিতি থাকায় খাওয়ার পর أحياناً গলা চুলকাতে পারে। এই সমস্যা এড়াতে রান্নার সময় লেবুর রস ব্যবহার করা ।
- পুষ্টি শোষণ: এর মধ্যে থাকা ভিটামিন 'এ' (ক্যারোটিন) চর্বিতে দ্রবণীয়। তাই এর সম্পূর্ণ পুষ্টি পেতে হলে ঘাটকোল অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর তেল দিয়ে রান্না করতে হবে।
পরিশেষে, ঘাটকোল শুধু একটি বুনো শাক নয়, এটি প্রকৃতি থেকে পাওয়া এক অমূল্য উপহার। তাই পরেরবার একে দেখতে পেলে অবহেলা না করে আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করে নিতে পারেন।