জন্মের পর থেকেই আমরা এক অদৃশ্য নিয়মকানুনের জালে জড়িয়ে যাই। আমাদের বলা হয় আমরা স্বাধীন, কিন্তু জীবনের প্রতিটি ধাপে কি আমরা সেই স্বাধীনতার চর্চা করতে পারি? নাকি পুরোটাই এক精心ভাবে তৈরি করা মায়া?
জন্ম থেকে নির্ধারিত জীবনের ছক
শৈশব থেকেই আমাদের এক নির্দিষ্ট পথে হাঁটার জন্য প্রোগ্রাম করা শুরু হয়। আমাদের বলা হয় স্কুলে যাও, ভালো ফলাফল করো, নইলে সমাজে টিকতে পারবে না। শিক্ষা অর্জনের নামে আমাদের মনকে এক বিশেষ ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
পড়াশোনা শেষে শুরু হয় নতুন নির্দেশ—একটি চাকরি নাও, সকাল থেকে বিকেল বসের অধীনে কাজ করো। জীবনের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় শুধু টাকার পেছনে দৌড়ানো। এরপর আসে সংসারের দায়; বিয়ে, সন্তান, বিল, ট্যাক্স—এক অদৃশ্য বোঝা থেকে আরেক বোঝায় স্থানান্তরিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের জীবন হয়ে ওঠে অসংখ্য শিকলে বাঁধা।
চিন্তার নিয়ন্ত্রণ ও অদৃশ্য শিকল
শুধু শারীরিক বা आर्थिकভাবেই নয়, মানসিকভাবেও আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অবসর সময়ে আমাদের বলা হয় টিভি দেখো, খবর শোনো—অর্থাৎ, যা বলা হচ্ছে, তাই বিশ্বাস করো। মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের চিন্তা-ভাবনাকেও একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা হয়, যাতে আমরা কখনোই সিস্টেমের বাইরে কিছু ভাবতে না পারি।
সবশেষে, আইনের আনুগত্য আর নিয়ম মেনে চলার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে, আমাদের মুখ দিয়ে জোর করে বলানো হয়—"আমি স্বাধীন"।
এ কেমন স্বাধীনতা?
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ কেমন স্বাধীনতা? যেখানে জীবনের প্রতিটি ধাপ—জন্ম, শিক্ষা, চাকরি, সংসার—সবই যেন আগে থেকে নির্ধারিত। যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে আমরা সমাজ, রাষ্ট্র আর সিস্টেমের অদৃশ্য শিকলে বাঁধা, সেখানে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি কি কেবলই এক প্রহসন নয়?
হয়তো আমরা সবাই এক অদৃশ্য গুহার বাসিন্দা। বাইরে থেকে আমাদের প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে যে আমরা মুক্ত, কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমরা কেবল এক একটি বারকোডে বাঁধা পণ্য, যার একটি নির্ধারিত দাম আছে, কিন্তু কোনো প্রকৃত স্বাধীনতা নেই।