কেয়ামত বা শেষ বিচারের দিনটি কখন ঘটবে, তার জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছেই রয়েছে। তিনি এটিকে গোপন রেখেছেন ঈমানদারদের পরীক্ষার জন্য, তবে এও সাবধান করে দিয়েছেন যে, তা হঠাৎ করেই চলে আসবে। আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেও তিনি বলেছেন এটি "হঠাৎ" আসবে, আর আজও আমরা হয়তো ভাবছি তা অনেক দূরে। কিন্তু ঈমানদার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো এর নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং সতর্ক থাকা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
"তারা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (বলে) ‘তা কখন ঘটবে? বলুন, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার রবেরই নিকট। ...যা হঠাৎ করেই তা তোমাদের উপর আসবে।" (সুরা আল-আরাফ: ১৮৭)
শেষ জামানা নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ভবিষ্যদ্বাণী
সাহাবীগণ (রাঃ) কেয়ামতের বিষয়ে ভীত ও সতর্ক থাকতেন এবং প্রায়ই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেন। তখন তিনি মুমিনদের বোঝার সুবিধার্থে কেয়ামতের পূর্বের কিছু নিদর্শনের কথা উল্লেখ করেছেন। আসুন, তেমনি একটি হাদিস থেকে শেষ জামানার কিছু নিদর্শন জানার ও বোঝার চেষ্টা করি।
হাদিসটি ইবনে মাসুদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, "হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! শেষ সময় চেনার কোনও উপায় আছে কি?" আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বললেন, "হে ইবন মাসুদ! এ সম্পর্কিত বহু নিদর্শন রয়েছে..."
(আল মুজামুল কাবীর, আত-তাবরানী, হাদিস নং-১০৪১)
কেয়ামতের কিছু নিদর্শন যা আজ আমাদের চারপাশে
হাদিসে বর্ণিত নিদর্শনগুলোর কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হলো, যা আজকের বর্তমান পরিস্থিতির সাথে গভীরভাবে চিন্তার উদ্রেক করে।
- ০১. বাচ্চারা ভীষণ বদমেজাজি হবে।
- ০২. বৃষ্টি হবে অম্লীয় (Acid Rain)।
- ০৩. খারাপ লোকেরা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।
- ০৪. বিশ্বাসঘাতকদের বিশ্বাস করা হবে এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের বিশ্বাসঘাতক মনে করা হবে।
- ০৫. সত্যবাদীদের মিথ্যাবাদী বলা হবে এবং মিথ্যাবাদীদের সত্যবাদী বলা হবে।
- ০৬. থালাসমূহ ক্রমাগত যোগাযোগ করতে থাকবে (অনেকের মতে, স্যাটেলাইট ডিশ) এবং মানুষেরা পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করবে।
- ০৭. মুনাফিকরা শাসন করবে।
- ০৮. সর্বাপেক্ষা মন্দ লোকেরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে।
- ০৯. মসজিদসমূহ অলংকৃত করা হবে, কিন্তু হৃদয়সমূহ হবে ঈমানশূন্য।
- ১০. ঈমানদারকে বকরির চেয়েও বেশি তুচ্ছ ও অপদস্থ করা হবে।
- ১১. নারী ও পুরুষের মধ্যে সমকামিতা ছড়িয়ে পড়বে।
- ১২. অল্পবয়স্ক লোকেরা প্রচুর সম্পদশালী হবে।
- ১৩. নারীদের নীতিভ্রষ্ট করতে বিভিন্ন আন্দোলন করা হবে।
- ১৪. সভ্যতার নামে পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চলবে।
- ১৫. বাদ্যযন্ত্র ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।
- ১৬. বাদ্যযন্ত্রগুলো তাদের মাথায় চড়ানো থাকবে (অনেকের মতে, হেডফোন)।
- ১৭. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।
- ১৮. লোকেরা ঠাট্টা-তামাশা ও বিদ্রুপে লিপ্ত হবে।
- ১৯. বহু শিশু বিবাহবন্ধন ছাড়াই জন্ম নেবে।
- ২০. ফিতনাগুলো মাদুরের আকৃতিতে প্রদর্শিত করা হবে (অনেকের মতে, টেলিভিশন বা ডিজিটাল স্ক্রিন)।
- ২২. এমন লোক দেখা যাবে যাদের হাতে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে এবং তা দিয়ে অন্যদের প্রহার করবে।
- ২৩. এমন নারী দেখা যাবে যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকবে, দুলিয়ে হাঁটবে এবং অন্যদের আকর্ষণ করবে। তাদের চুল হবে উটের কুঁজের মতো। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
- ২৪. উম্মাহর কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে।
আমাদের করণীয় ও প্রার্থনা
এই নিদর্শনগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমরা পৃথিবীর শেষ প্রান্তে অবস্থান করছি। যে কোনো মুহূর্তে কঠিন সময় ঘনিয়ে আসতে পারে। যখন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে, তখন তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।
হে আল্লাহ্, ইয়া রাব্বুল আলামিন, এই কঠিন ফিতনার যুগে আমাদেরকে আপনার দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন। আমাদের হালাল রিজিক সহজ করে দিন এবং আপনার অনুগ্রহে আমাদের সচ্ছলতা দান করুন। দাজ্জালের অনুসারীদের ফেতনা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা ও কল্যাণ দান করুন এবং মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিন। আমীন।