বাল্যবিবাহকে খারাপ প্রমাণ করার জন্য মূলত দুই ধরনের যুক্তি দেওয়া হয়—একটি হলো আবেগীয় (Emotional Argument) এবং অন্যটি শারীরিক ঝুঁকি (Physical Evidence)। কিন্তু আজকের দিনে এই যুক্তিগুলো কতটা প্রাসঙ্গিক? চলুন, এই প্রচলিত ধারণাগুলোকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যাক।
‘আবেগী যুক্তি’ ও দ্বি-মুখী নীতি
বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ আবেগীয় যুক্তি হলো—"মেয়েরা আকাশে উড়তে পারবে না, পড়াশোনা বা ক্যারিয়ার গড়তে পারবে না।" মজার ব্যাপার হলো, যখন আমরা বাল্য বয়সে প্রেম, সহশিক্ষা বা ব্যভিচারের মতো বিষয়গুলোকে খারাপ বলি, তখন সেই একই এনজিও বা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কথাকে ‘আবেগীয় যুক্তি’ বলে উড়িয়ে দেয়।
তারা তাদের মতবাদ প্রচারের জন্য সরকারি সহায়তা পায়, অথচ যারা पारंपरिक মূল্যবোধের কথা বলে, তাদের কোনো কথাই শোনা হয় না। এটি এক ধরনের দ্বি-মুখী নীতি নয় কি?
শারীরিক ঝুঁকির যুক্তিটি কি আজকের দিনেও খাটে?
বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই যুক্তিটি: "কম বয়সে নারী গর্ভধারণ করলে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার বেশি"। কিন্তু এই যুক্তিটি আজকের প্রেক্ষাপটে কতটা শক্তিশালী?
- প্রথমত, যদি কম বয়সে গর্ভধারণই মূল সমস্যা হয়, তবে বিয়ে না করে গর্ভধারণ বা ‘বাল্যব্যভিচার’ বন্ধে কি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? হয়নি। তাহলে শুধু বিয়েকে টার্গেট করা হচ্ছে কেন?
- দ্বিতীয়ত, এই যুক্তিটি ১৯৭৫ সালের, যখন উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা বা সিজারিয়ান পদ্ধতি সহজলভ্য ছিল না। ২০২৫ সালে এসে উন্নত মেডিসিন ও সিজারিয়ান পদ্ধতির যুগে এই যুক্তি প্রায় অচল।
- তৃতীয়ত, জন্মনিরোধক ব্যবহার করে একটি মেয়ে ১২ বছরে বিয়ে করেও ২১ বছর বয়সে মা হতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকির যুক্তিটি তো আর খাটছেই না।
- চতুর্থত, নারী মা হওয়ার সেরা সময় ২১-২৪ বছর। কিন্তু এই বয়সে ভার্সিটি পড়ুয়া কয়জন মেয়েকে মা হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়? বরংচ তাদের কটাক্ষ করা হয়। আবার যে এনজিওগুলো বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করে, তারাই গর্ভপাতের পক্ষে অবস্থান নেয়, যা এক ধরনের স্ববিরোধিতা।
তাহলে আসল সমস্যাটা কোথায়?
প্রকৃতপক্ষে, আজকের দিনে বালeterminateভাবে ‘বাল্যবিবাহ খারাপ’ বলার মতো শক্তিশালী কোনো যুক্তি নেই। সমস্যাটি হলো ১৮ বছরের নিচে সবাইকে ‘শিশু’ বলার অযৌক্তিক আইন। বয়ঃসন্ধিকালের (Puberty) পর একজন কিশোর বা কিশোরী যৌনতা এবং অপরাধ সম্পর্কে বোঝে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের জন্য এই সীমা ১০-১৪ এবং ছেলেদের জন্য ১১-১৬ বছর। এরপর তারা আর শিশু থাকে না, যদিও জানার অপরিপক্কতা থাকতে পারে।
এর সমাধান হতে পারে, বিয়ের জন্য বয়সের নিম্নসীমা তুলে দিয়ে সাবালকদের জন্য বিয়ে বৈধ করা এবং ১৭-১৮ বছরের আগে যেন সন্তান না নেওয়া হয়, সে বিষয়ে উৎসাহিত করা।
কিছু সাধারণ প্রশ্নের জবাব
- আপনারা কি মেয়েদের পড়াশোনা বা ক্যারিয়ারের বিরোধী?
- মোটেও না। আমরা মূলত সেই শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধী যেখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গে পড়াশোনা করে এবং মেয়েদেরকে তাদের নারীসুলভ (Feminine) গুণাবলী বা ছেলেদেরকে পুরুষালি (Masculine) ও টেকনিক্যাল কাজের শিক্ষা দেওয়া হয় না, যা একটি সুস্থ পরিবার গঠনের জন্য জরুরি।
- এত অল্প বয়সে ছেলে-মেয়েরা বিয়ের কী বুঝবে?
- যদি ক্লাস ৮-১২ এর কঠিন বইপত্র মাথায় ঢোকানো সম্ভব হয়, তাহলে ছোটবেলা থেকে সংসার, স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব বা পারিবারিক কাজ সম্পর্কে বোঝানো সম্ভব নয় কেন? এই যুক্তিগুলো ভিত্তিহীন।
পরিশেষে, কেউ যদি কম বয়সে বিয়ে করতে না চায়, সেটা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা। কিন্তু যারা করতে চায়, তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার আপনি কে?