যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র রব আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি আমাদের একমাত্র ইলাহ (বিধানদাতা)। আজকের আলোচনাটি সেই সব মানুষদের জন্য, যারা প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করতে চান।
মানবধর্ম বনাম আল্লাহ্র ধর্ম
গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র বা নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা—এগুলো শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার আধুনিক পদ্ধতি নয়, বরং এগুলো এক একটি বস্তুবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার উপর প্রতিষ্ঠিত স্বতন্ত্র ‘মানবধর্ম’। যেখানে আল্লাহ্র ধর্ম বিশ্বাসের (ঈমান) উপর প্রতিষ্ঠিত, সেখানে এই মানবধর্মগুলো যেকোনো ঐশ্বরিক বিধানকে চ্যালেঞ্জ করার এবং বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।
এই মানবধর্মগুলো বাস্তবায়নের মূল ভিত্তি হলো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। ধর্মনিরপেক্ষতা এক ধরনের অঘোষিত নাস্তিকতা, যা মানুষের মন থেকে ধীরে ধীরে ধর্মীয় অনুভূতি ও বিশ্বাসকে সরিয়ে দেয়। একজন ব্যক্তি হয়তো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ধুমধাম করে পালন করেন, কিন্তু শাসন ও জীবনব্যবস্থার ক্ষেত্রে তিনি আল্লাহ্র বিধানের পরিবর্তে মানবসৃষ্ট আইনকেই মেনে নেন। কারণ, একজন সত্যিকারের ঈমানদার কখনোই এমন আইন মেনে নিতে পারেন না যা আল্লাহ্র বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, যেমন—মদের লাইসেন্স, পতিতালয়ের বৈধতা বা সুদভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
জাতীয়তাবাদ: ঈমানী ভ্রাতৃত্বের বিভাজন
এই মানবধর্মের আরেকটি শক্তিশালী বিশ্বাস হলো জাতীয়তাবাদ, যা নিজ সীমানার ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করে। এটি মুসলিমদের বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধকে কেড়ে নেয়। এর কারণেই আমরা হয়তো নিজের দেশের একজন অধার্মিক মানুষকে ভাই মনে করি, কিন্তু সীমান্তের ওপারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমকে আপন ভাবতে পারি না। ফিলিস্তিন বা সিরিয়ায় যখন আগ্রাসন চালানো হয়, তখন মুসলিম বিশ্ব এই জাতীয়তাবাদের কারণেই একত্রিত হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে না।
আধুনিক বিশ্বযুদ্ধ: কাদের লড়াই?
বর্তমান বিশ্বে যে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চলছে, তা মূলত এই ধর্মহীন জাতীয়তাবাদীদের মধ্যেই ক্ষমতার লড়াই। এটি সেকুলার গণতান্ত্রিক জোট এবং সমাজতান্ত্রিক জোট—এই দুই ‘অবাধ্য জাতির’ একক বিশ্বব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ আল্লাহ্র পক্ষ থেকে তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া শাস্তি।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই দুই যুদ্ধবাজ দল থেকে মুমিনদের বেঁচে থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন: "দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ে যুদ্ধকারী দুইদল থেকে তোমরা বেঁচে থাক, কেননা, তারা উভয় দল ধীরে ধীরে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হতে থাকবে।" [আল ফিতান- ৩৫৩]
ফিতনার যুগে মুমিনের করণীয়
তাহলে এই ফেতনার যুগে একজন মুসলমানের কী করা উচিত? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশনা অত্যন্ত স্পষ্ট।
তিনি বলেছেন, "তখন তুমি মুসলমানদের জামাআত এবং তাদের ইমামকে আঁকড়িয়ে ধরো।" জিজ্ঞাসা করা হলো, যদি তাদের কোনো ইমাম বা জামাআত না থাকে, তাহলে কী করতে হবে? তিনি জবাবে বললেন, "সকল দলকে পুরোপুরি বর্জন করো, যদিও সেটা গাছের শিকড় কামড়ে ধরার মাধ্যমে হোক। এমন পরিস্থিতিতে মৃত্যু এসে গেলেও সেটা ছাড়া যাবে না।" (আল ফিতান -৩৫৪)
এর অর্থ হলো, কোনো যোগ্য ইসলামী নেতৃত্ব (খলিফা বা আমির) না থাকলে, মুমিনের দায়িত্ব হলো সকল প্রকার দলাদলি ও ফিতনা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা এবং নিজের ঈমানকে রক্ষা করা। কারণ, জাতীয়তাবাদ বা গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করা আল্লাহ্র জন্য যুদ্ধ করা নয়।
পরিশেষে প্রশ্ন জাগে, মানবধর্ম বা গণতন্ত্র যদি একটি ধর্মই হয়, তাহলে এর প্রভু কে, আর এর নবীরাই বা কারা?