মহাবিশ্বের একমাত্র বিধানদাতা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের নামে শুরু করছি। শেষ জামানার বিভিন্ন ফিতনা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের সতর্ক করে গেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো ‘আল-মালহামা আল-কুবরা’ বা মহাযুদ্ধ, যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হিসেবে সংঘটিত হতে পারে। চলুন, এই বিষয়ে হাদিসের আলোকে কিছু নিদর্শন ও আমাদের করণীয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কখন এবং কীভাবে ঘটবে এই মহাযুদ্ধ?
হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, এই মহাযুদ্ধটি ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের ঠিক পূর্বেই সংঘটিত হবে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো:
- রমজান মাসের আলামত: "তোমরা রমজান মাসে পূর্বাকাশ (সম্ভবত চীন, জাপান বা খোরাসান অঞ্চল) থেকে আগুনের কিছু স্তম্ভ (পারমাণবিক বিস্ফোরণ) প্রকাশ পেতে দেখবে।" [আল ফিতান - ৬৪৯]
- দুটি বৃহৎ দলের যুদ্ধ: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "কেয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত দুটি বৃহৎ দল পরস্পরে মারাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত না হয়। ... অথচ তাদের মূল দাবি হবে এক ও অভিন্ন।" (বুখারী ৭১২১)। আজকের বিশ্বের দিকে তাকালে দুটি প্রধান সেকুলার পরাশক্তি জোটকে দেখা যায়, যাদের উভয়েরই মূল দাবি হলো বিশ্বজুড়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
- অগ্নি নিক্ষেপ: রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "কিয়ামতের পূর্বে মানুষ আগুন নিক্ষেপ করবে এবং সেই আগুন দ্বারা তারা নিজেরাই ধ্বংস হবে।" (কিতাবুল ফিরদাউস, হা- ১১৭৯)। এই ‘আগুন’কে আধুনিক যুগের পারমাণবিক অস্ত্রের সাথে তুলনা করা হয়।
ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা: হাদিসের বর্ণনা
এই যুদ্ধের ভয়াবহতা হবে অকল্পনীয়। বিভিন্ন হাদিস ও বর্ণনায় এর যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা অত্যন্ত করুণ।
- জনসংখ্যার বিনাশ: একটি বর্ণনায় এসেছে, "পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত এ ঘটনা (ইমাম মাহদীর আবির্ভাব) ঘটবে না।" (বিহারুল আনোয়ার, খন্ড ৫২)
- বিভিন্ন অঞ্চলের পতন: ‘আস-সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান’ গ্রন্থের একটি দীর্ঘ বর্ণনায় ইরাক, আরব উপদ্বীপ, স্পেন, ইরান, খোরাসান, সিন্ধ, হিন্দুস্তানসহ বহু অঞ্চলের পতনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার কারণ হিসেবে ক্ষুধা, দুর্ভিক্ষ, পারস্পরিক বিবাদ এবং অস্ত্রের কথা বলা হয়েছে।
- আসমানী দুর্যোগ: আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেন, "অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেই দিনের, যেদিন আকাশ স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে এবং তা মানব জাতিকে আবৃত করে ফেলবে। এটা হবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।" (সুরা দুখান: ১০-১১)। এটিকে কেয়ামতের অন্যতম বড় একটি নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়।
সংকটকালীন প্রস্তুতি: আমাদের করণীয় কী?
এই কঠিন সময়ের জন্য জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। নিচে কিছু করণীয় উল্লেখ করা হলো:
- ঈমান ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি: সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র উপর ঈমান ও তাওয়াক্কুল অটুট রাখা এবং মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা। ইবাদতে মনোযোগী হওয়া এবং বেশি বেশি জিকির করা।
- খাদ্য ও পানীয় নিরাপত্তা: হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরু হলে কমপক্ষে এক বছরের শুকনো খাবার (চাল, ডাল) ও বিভিন্ন বীজ সংরক্ষণ করা। পতিত জমিতে চাষাবাদের প্রস্তুতি নেওয়া, গবাদিপশু (বিশেষ করে ছাগল) পালন করা এবং মাছ চাষের ব্যবস্থা করা।
- আর্থিক ও বাস্তবিক প্রস্তুতি: কাগজের মুদ্রার (ডলার) পতন হতে পারে, তাই সঞ্চয়ের কিছু অংশ সোনা বা রুপায় রূপান্তর করে রাখা উত্তম। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে, তাই সৌরবিদ্যুৎ, মোমবাতি, হারিকেন এবং আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা রাখা। নিরাপদ পানির জন্য নলকূপ বা কুয়োর ব্যবস্থা করা।
- নিরাপত্তা ও আশ্রয়: যুদ্ধের সময় শহরগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই গ্রামের দিকে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা রাখা এবং পরিবারের নিরাপত্তার জন্য পরিচিত ও বিশ্বাসযোগ্য লোকদের সাথে একতাবদ্ধ থাকা।
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ: ঈমান রক্ষা করা
জাগতিক প্রস্তুতির চেয়েও এই সময়ে সবচেয়ে কঠিন হবে ঈমান রক্ষা করা। একদিকে থাকবে জীবনের সংকট, অন্যদিকে ঈমানের দাবি। খুব কম মানুষই তখন নিজের ঈমানকে হেফাজত করতে পারবে। তাই এখন থেকেই ঈমানকে বাঁচানোর জন্য প্রস্তুতি নিন, উপযুক্ত ইলম অর্জন করুন এবং নেক আমলে মনোযোগী হোন।