"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু"—আল্লাহ ছাড়া কোনো বিধানদাতা বা আইনের আনুগত্যের মালিক নেই। এই কালিমার প্রকৃত অর্থ যদি আজকের বিশ্ব বুঝত, তবে চিত্রটি হয়তো ভিন্ন হতো। এই কালেমার মূলনীতি বনাম দাজ্জালের শাসনব্যবস্থা (গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ)—এই দুইয়ের সংঘাতই হলো শেষ জামানার সবচেয়ে বড় ফেতনা।
ইয়াজুজ-মাজুজ: রূপকথার গল্প বনাম বাস্তবতা
আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি, ইয়াজুজ-মাজুজ এক অত্যাচারী জাতি, যারা এক দেওয়ালের পেছনে বন্দি আছে এবং কেয়ামতের আগে বেরিয়ে এসে পৃথিবীতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, এই ধারণাটি হয়তো আমাদের ভুল পথে চালিত করছে?
ইয়াজুজ-মাজুজ আদম (আঃ) এর সন্তান এবং হাদিস অনুযায়ী, জাহান্নামীদের হাজারে নয়শত নিরানব্বই জনই হবে তাদের মধ্য থেকে। আদম সন্তান মাটির নিচে বাস করে না। তারা আমাদের মাঝেই আছে। তারাই সেই জাতি, যারা গত শতাব্দীতে দুটি বিশ্বযুদ্ধ বাঁধিয়ে পৃথিবীতে ফেতনা সৃষ্টি করেছে, নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে এবং পুরো বিশ্বকে আল্লাহ্র বিধান থেকে বের করে এনে মানবসৃষ্ট আইনের (শিরক) অধীনে নিয়ে এসেছে। আমরা যখন দেওয়ালের পেছনে তাদের খুঁজছি, তারা তখন চোখের সামনেই পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে পৃথিবীকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বনাম ‘দাজ্জালের শাসন’
ইসলামে শাসনব্যবস্থা আর ধর্ম আলাদা কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আজ মুসলিম বিশ্ব এমন এক ব্যবস্থার অধীনে বাস করছে, যা এই দুটিকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলেছে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সুদভিত্তিক ব্যাংক, কাগজের মুদ্রা, ভেজাল পণ্য এবং কাঁটাতারের জাতীয়তাবাদ—এই সবই সেই দাজ্জাল পরিকল্পিত সমাজব্যবস্থার অংশ, যা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র মূলনীতির পুরোপুরি বিরোধী।
আজকের মুসলিমরা কুরআনের বিধানকে বাস্তবায়ন না করে শুধু সুরের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। আমরা এমন এক পথভ্রষ্ট জাতিতে পরিণত হয়েছি যে, ইসলাম কী আর জাহেলিয়াত কী, তার পার্থক্যই ভুলে গেছি।
আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা যখন নিজেরাই হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন জাহান্নামীদের মতো জীবনযাপন করছি, তখন ইয়াজুজ-মাজুজকে আয়নায় না দেখে মাটির নিচে খোঁজাটাই স্বাভাবিক। আমরা যখন আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে মানবসৃষ্ট আইন ও জীবনব্যবস্থাকে মেনে নিয়েছি, তখন আমরা নিজেরাই সেই ফেতনার অংশ হয়ে গেছি।
হাদিস অনুযায়ী, কেয়ামতের আগে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু" বলার মতো লোক থাকবে না। এর অর্থ হয়তো শুধু মুখে বলা নয়, বরং এই কালিমার প্রকৃত অর্থ—আল্লাহকেই একমাত্র বিধানদাতা হিসেবে মেনে নেওয়া—এমন লোক আর অবশিষ্ট থাকবে না।
শেষ জামানার চূড়ান্ত পর্যায়
তবে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন এই জাতিকে শেষ সুযোগ দিতেই ইমাম মাহদী এবং ঈসা (আঃ) এর মাধ্যমে পৃথিবীতে ইসলামের খিলাফত শাসনব্যবস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করবেন, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।
একটি শেষ প্রার্থনা
ইয়া রাব্বুল আলামীন, আপনি আমাকে, আমার পরিবার-সন্তানদেরকে এবং সকল মুমিনদেরকে প্রকৃত "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। পথভ্রষ্ট মুসলিমদের আপনি দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করুন। যারা আপনার দ্বীন ব্যতীত অন্যকিছু দিয়ে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে, তাদের ধ্বংস বৃদ্ধি করুন এবং আমাদেরকে ইয়াজুজ-মাজুজ এর ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। আপনি আমাদের একমাত্র রব, আমাদের ক্ষমা করুন এবং কাফের-মুশরেকদের বিরুদ্ধে বিজয় দান করুন। আমীন।