পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য মূলত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে—টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা, শুক্রাণুর সংখ্যা এবং বীর্যের গুণমান। বহু বছর ধরেই पारंपरिक চিকিৎসায় কালোজিরা ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তবে আধুনিক বিজ্ঞানও এখন এর কার্যকারিতা স্বীকার করে নিচ্ছে। চলুন, পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর কালোজিরার প্রভাব নিয়ে গবেষণা কী বলছে, তা জেনে নেওয়া যাক।
গবেষণার আলোয় কালোজিরার কার্যকারিতা
বিভিন্ন প্রি-ক্লিনিক্যাল এবং ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে যে, কালোজিরা বীজ এবং বিশেষ করে এর তেল পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা উন্নত করতে অত্যন্ত কার্যকর। ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি সিস্টেমেটিক রিভিউতে ২৪টি ভিন্ন গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কালোজিরা নারী ও পুরুষ উভয়েরই প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
একটি যুগান্তকারী হিউম্যান ট্রায়াল
এই বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা পরিচালিত হয় ৭৮ জন বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় ভোগা পুরুষের উপর, যাদের শুক্রাণুর সংখ্যা কম বা গুণগত মান দুর্বল ছিল।
- গবেষণার পদ্ধতি: অংশগ্রহণকারীদের দুই মাস ধরে প্রতিদিন ২.৫ মিলিগ্রাম কালোজিরার তেল খেতে দেওয়া হয়।
- ফলাফল: মাত্র দুই মাস পরেই তাদের মধ্যে অভাবনীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। গবেষণায় দেখা যায়:
- টেস্টোস্টেরনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
- শুক্রাণুর মোট সংখ্যা বেড়েছে।
- শুক্রাণুর গতিশীলতা বা সঠিকভাবে চলাফেরার ক্ষমতা (Motility) উন্নত হয়েছে।
- শুক্রাণুর স্বাভাবিক আকৃতি ও গঠন (Morphology) উন্নত হয়েছে, যা সফল গর্ভধারণের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ট্রায়ালে কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এটি প্রমাণ করে যে, কালোজিরা পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় একটি নিরাপদ ও প্রাকৃতিক উপাদান।
কীভাবে কাজ করে এই প্রাকৃতিক উপাদান?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কালোজিরা শরীরে ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ কমাতে সাহায্য করে। এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস শুক্রাণুর কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এর গুণমান নষ্ট করে দেয়। কালোজিরা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এই ক্ষতি থেকে শুক্রাণুকে রক্ষা করে। এর ফলে শুক্রাণুর উৎপাদন বাড়ে এবং সামগ্রিক প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
পরিশেষে, আধুনিক গবেষণা এটিই প্রমাণ করে যে, কালোজিরা পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে একটি কার্যকর এবং নিরাপদ প্রাকৃতিক পথ্য হতে পারে।