বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাবারের প্রয়োজন—এটা হলো ক্ষুধা। কিন্তু ক্ষুধা না থাকলেও শুধু স্বাদের লোভে বা চোখের সামনে ভালো খাবার দেখে খাওয়ার যে তীব্র ইচ্ছা, তাকে বলে অ্যাপেটাইট (Appetite)। এই দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য না করতে পারাটাই আজ আমাদের অনেক বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘অ্যাপেটাইট’ যেভাবে আপনার শরীরকে ধ্বংস করে
মাঝে মাঝে পছন্দের খাবার খাওয়ার ইচ্ছা হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন এই লোভ বা অ্যাপেটাইট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তা নীরবে আমাদের শরীরকে ধ্বংস করে দেয়।
- ফ্যাটি লিভার ও ডায়াবেটিস: প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খেলে শরীরে চর্বি জমে ফ্যাটি লিভার হয়। একই সাথে, এটি শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে, যার চূড়ান্ত পরিণতি হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিস।
- হৃদরোগ ও স্ট্রোক: অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ায়, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
- হজমের সমস্যা: বেশি খাওয়ার ফলে আমাদের হজমতন্ত্রের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে, যা থেকে গ্যাস, অম্বল, বুক জ্বালাপোড়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা শুরু হয়।
- ওজন বৃদ্ধি ও ক্লান্তি: বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের মেটাবলিজম কমে যায়। ফলে কৈশোরে যা সহজে হজম হতো, এখন তা হয় না। অতিরিক্ত খাবার তাই দ্রুত ওজন বাড়ায় এবং শরীরে এক ধরনের অস্বাভাবিক ক্লান্তি নিয়ে আসে।
লোভকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ কিছু উপায়
খাবারের প্রতি এই ಅನಿಯಂತ್ರಿತ আকর্ষণকে বশে আনা খুব জরুরি। এর জন্য কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
- পার্থক্য বুঝুন: খাওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, এটা কি আসল ক্ষুধা নাকি শুধু খাওয়ার ইচ্ছা?
- মনোযোগ দিয়ে খান: তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে, খাবারের স্বাদ ও গন্ধ উপভোগ করে খান। একে বলা হয় মাইন্ডফুল ইটিং।
- প্রলোভন থেকে দূরে থাকুন: হাতের কাছে বা ফ্রিজে অতিরিক্ত লোভনীয় খাবার জমিয়ে রাখবেন না।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন: অনেক সময় আমরা পানির তৃষ্ণাকে ক্ষুধা ভেবে ভুল করি। খাওয়ার ইচ্ছা হলে আগে এক গ্লাস পানি পান করে দেখুন।
- খাবার ভাগাভাগি করুন: প্লেটে বেশি খাবার না নিয়ে, অন্যের সাথে ভাগ করে খান। এতে মানসিক তৃপ্তিও আসবে, আবার অতিরিক্ত খাওয়াও হবে না।
শুধু নিজের নয়, ভাবুন অন্যের কথাও
পেট খালি আছে বা সামর্থ্য আছে বলেই অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলা শুধু শরীরের জন্যই ক্ষতিকর নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক অবিচারও বটে। যেখানে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ একবেলা খাবারের জন্য কষ্ট করছে, সেখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেয়ে বা খাবার নষ্ট করে আমরা এক অমানবিকতার পরিচয় দিই।
আপনার প্লেটের অতিরিক্ত খাবারটুকু বরং তার সাথে ভাগ করে নিন, যার কাছে কোনো খাবার নেই। ক্ষুধা মেটাতে খাবার খান, লোভ মেটাতে নয়। এটিই একটি সুস্থ, স্বাভাবিক এবং মানবিক জীবনযাপনের মূলমন্ত্র।