মধু যে শুধু একটি সুস্বাদু খাবার তা নয়, এটি এক অসাধারণ প্রাকৃতিক ঔষধও বটে। বিশেষ করে পোড়া ক্ষত এবং পোকামাকড়ের কামড় সারাতে এর কার্যকারিতা আধুনিক গবেষণাতেও প্রমাণিত হয়েছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ে বিজ্ঞান কী বলছে।
এক যুগান্তকারী গবেষণা: যখন মধু হারিয়ে দিল আধুনিক মলমকে
২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভারতের ইন্দোরের মহারাজা যশবন্তরাও হাসপাতালে পোড়া রোগীদের ওপর একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। ডঃ প্রবীণ সিং বাঘেলের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় রোগীদের দুটি দলে ভাগ করা হয়। এক দলকে চিকিৎসা করা হয় প্রচলিত সিলভার সালফাডিয়াজিন মলম দিয়ে, এবং অন্য দলকে ড্রেসিং করা হয় প্রাকৃতিক মধু দিয়ে।
ফলাফল ছিল আশ্চর্যজনক!
- যে রোগীদের ক্ষতে মধু ব্যবহার করা হয়েছিল, তাদের ঘা সেরে উঠতে সময় লেগেছিল গড়ে মাত্র ১৮ দিন।
- অন্যদিকে, বাজারের প্রচলিত মলম ব্যবহার করা রোগীদের ঘা সারতে সময় লেগেছিল গড়ে ৩২ দিন!
গবেষণায় আরও দেখা যায়, মধু ক্ষতের সংক্রমণ, তীব্র ব্যথা ও দুর্গন্ধ কমাতে দারুণ কার্যকর। এছাড়া মধু ব্যবহারে পোড়া ক্ষতের দাগ এবং ত্বক শক্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও অনেকাংশে কমে যায়। অর্থাৎ, মধু শুধু ক্ষত নিরাময়ের গতিই দ্বিগুণ করেনি, বরং বহু জটিলতা থেকেও রক্ষা করেছে।
পোকা কামড়ালে কী করবেন?
মৌমাছি, বোলতা, মশা বা পিঁপড়ার মতো সাধারণ পোকামাকড়ের কামড়ের চিকিৎসাতেও মধু অত্যন্ত উপকারী। এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ ফোলা এবং যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে।
কোনো পোকা কামড়ানোর পর সেই স্থানে সাথে সাথে এবং নিয়মিত মধু লাগালে লালচে ভাব ও ঘা দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং দাগ মেলাতেও সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে, বিষাক্ত কোনো পোকার কামড়ে যদি শ্বাসকষ্ট বা বমির মতো মারাত্মক লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
যেভাবে কাজ করে এই প্রাকৃতিক ঔষধ
মধু স্বাদে মিষ্টি হলেও এর মধ্যে এক ধরনের কষা গুণ রয়েছে, যা ক্ষত, ব্রণ বা ঘা দ্রুত পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ করে নিরাময় হতে সাহায্য করে। এটি ক্ষতস্থানকে আর্দ্র রাখে এবং এর প্রাকৃতিক এনজাইমগুলো ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করে নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
আপনার করণীয়
গরম তেল, পানি, আগুন বা যেকোনোভাবেই শরীর পুড়ে গেলে, ক্ষতস্থানে সরাসরি প্রাকৃতিক মধু ব্যবহার করতে পারেন। ফার্মেসির রাসায়নিক মলমের বদলে আমাদের হাতের কাছের এই সহজলভ্য, কার্যকর এবং নিরাপদ প্রাকৃতিক ঔষধটিই হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ।