আমরা মাছকে 'মাছ' হিসেবেই চিনি, কিন্তু পুষ্টিবিজ্ঞানের ভাষায় এটি এক বিশেষ ধরনের মাংস বা মিট। আবার গরু বা খাসির মতো লাল মাংস নয়, এটিকে বলা হয় সাদা মাংস। কেন এই বিভাজন এবং মাছের শরীরের কোন অংশটি আসলে কী দিয়ে তৈরি—চলুন, সেই অবাক করা গঠন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কেন মাছকে ‘সাদা মাংস’ বলা হয়?
মাংস লাল না সাদা হবে, তা নির্ভর করে মায়োগ্লোবিন নামক এক ধরনের প্রোটিনের উপর। গরু, খাসি বা হাঁসের মাংসে এই মায়োগ্লোবিন প্রচুর পরিমাণে থাকে, তাই তাদের মাংসের রঙ লাল হয়।
অন্যদিকে, মাছ, মুরগি বা খরগোশের মাংসে মায়োগ্লোবিন প্রায় থাকে না বললেই চলে, একারণেই এদের মাংস সাদা রঙের হয়। তবে এর কিছু ব্যতিক্রমও আছে। যেমন টুনা, স্যামন বা ম্যাকারেল মাছের মাংসে মায়োগ্লোবিন কিছুটা বেশি থাকায় এদের রঙ লালচে বা গোলাপি দেখায়।
‘মাছ’ এবং ‘মাংস’ – আসল ব্যাপারটা কী?
বিজ্ঞানের ভাষায়, যেকোনো প্রাণীর ভক্ষণযোগ্য পেশি টিস্যুকেই (Muscle Tissue) মাংস বা মিট বলা হয়। আমরা মাছের যে নরম অংশটি খাই, সেটি মূলত তার শরীরের পেশি, যা তাকে পানিতে সাঁতার কাটতে ও চলাফেরা করতে সাহায্য করে। তাই, মাছ আসলে 'ফিশ মিট'।
মাছের মাংসের গঠন স্থলজ প্রাণীদের চেয়ে আলাদা। এর পেশি ফাইবারগুলো খুব ছোট ও নরম হয়, যার ফলে এটি খুব দ্রুত রান্না হয় এবং সহজে হজম করা যায়।
মাছের পিঠ আর পেটের মাংসের পার্থক্য
আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, মাছের সব অংশের স্বাদ বা গঠন একরকম হয় না। এর কারণ হলো, মাছের শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের টিস্যু থাকে।
- সাদা পেশি (Lean Muscle): মাছের শরীরের উপরের বা পিঠের দিকের বেশিরভাগ অংশই এই সাদা পেশি দিয়ে তৈরি। এটি কম চর্বিযুক্ত লিন প্রোটিনের দারুণ উৎস। আমরা মূলত মাছের এই অংশটিই বেশি খাই।
- চর্বিযুক্ত টিস্যু (Fatty Tissue): মাছ তার শরীরের শক্তি চর্বি আকারে জমিয়ে রাখে, যা মূলত পেটের দিকে বা চামড়ার নিচে থাকে। এই চর্বি মাছকে পানিতে ভেসে থাকতে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ইলিশ, কাতলা বা রুই মাছের পেটের অংশটি যে এত সুস্বাদু আর তেলতেলে হয়, তার কারণ হলো এই জমে থাকা ফ্যাট টিস্যু। একারণেই মাছের পেটের অংশ রান্না করলে বা ভাজলে বেশি তেল বের হয়।
সুতরাং, পরেরবার যখন মাছ খাবেন, তখন শুধু এর স্বাদই নয়, এর শরীরের এই удивительный গঠন সম্পর্কেও ভেবে দেখতে পারেন!