রান্নাঘরের অন্যতম পরিচিত একটি মসলার নাম গোলমরিচ, যা "মসলার রাজা" হিসেবেও পরিচিত। এর ঝাঁঝালো স্বাদ যেমন খাবারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, তেমনি এর ঔষধি গুণ শরীরকে নানা রোগ থেকে দূরে রাখে। চলুন, এই অসাধারণ মসলাটির গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
হজমের মহৌষধ গোলমরিচ
গোলমরিচের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এটি আমাদের হজমশক্তিকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। এটি পাকস্থলীকে উদ্দীপিত করে এবং প্রয়োজনীয় পাচক রস তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে খাবার ভালোভাবে হজম হয়। এছাড়া পেট ফাঁপা, গ্যাস বা টক ঢেকুরের মতো সাধারণ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেও গোলমরিচ অত্যন্ত কার্যকর।
আয়ুর্বেদের চোখে মসলার রাজা
প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে গোলমরিচকে একটি শক্তিশালী ঔষধি হিসেবে গণ্য করা হয়। আয়ুর্বেদ মতে, এটি শরীরে জমে থাকা কফ ও বায়ু কমায়, কিন্তু অতিরিক্ত খেলে পিত্ত বাড়াতে পারে। এর মূল কাজগুলো হলো:
- দীপন ও পাচন: এটি শরীরের হজমশক্তি বা 'অগ্নি' বৃদ্ধি করে এবং পেটে জমে থাকা অপাচ্য, বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।
- কফ-নাশক: সর্দি-কাশি, বুকে জমে থাকা কফ এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যায় গোলমরিচ মহৌষধের মতো কাজ করে। এটি শরীরকে উষ্ণ করে এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে।
- রসায়ন: এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে।
কীভাবে এবং কখন খাবেন?
গোলমরিচের সর্বোচ্চ উপকার পেতে এর সঠিক ব্যবহার জানা জরুরি।
- সকালের পানীয়: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে সামান্য গোলমরিচ গুঁড়া মিশিয়ে খেলে হজমশক্তি বাড়ে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায়।
- মধু ও গোলমরিচ: কাশি, গলা ব্যথা এবং সর্দির জন্য এক চামচ মধুর সাথে সামান্য গোলমরিচ গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়া খুবই উপকারী।
- ভেষজ চা: শীতকালে আদা, তুলসী এবং গোলমরিচ দিয়ে বানানো চা শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং ঠান্ডা লাগা থেকে বাঁচায়।
- দৈনিক রান্নায়: প্রতিদিনের স্যুপ, ডাল, সবজি বা ডিমে সামান্য গোলমরিচ গুঁড়া ছিটিয়ে দিলে খাবারের স্বাদ বাড়ার পাশাপাশি তা সহজে হজমও হয়।
কারা খাবেন আর কারা থাকবেন সতর্ক?
গোলমরিচ একটি শক্তিশালী মসলা, তাই এর ব্যবহার পরিমিত হওয়া উচিত।
- যাদের জন্য উপকারী: যাদের প্রায়ই সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, গ্যাস বা হজমের সমস্যা হয়, তারা নিয়মিত অল্প পরিমাণে গোলমরিচ খেলে দারুণ উপকার পাবেন।
- যাদের সতর্ক থাকা উচিত: যাদের পিত্ত-প্রবণতা বেশি, অর্থাৎ অ্যাসিডিটি, হার্টবার্ন বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাদের গোলমরিচ খুব সাবধানে এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। কারণ অতিরিক্ত সেবনে তাদের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।