অসুখ কি সত্যিই অসুখ? জানুন আপনার দেহের বিস্ময়কর নিরাময় ক্ষমতা

অসুখ কি সত্যিই অসুখ? জানুন আপনার দেহের বিস্ময়কর নিরাময় ক্ষমতা
আমাদের জীবনে সর্দি, মাথাব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা বা ত্বকে র‍্যাশ—এসব উপসর্গকে আমরা রোগ বা অসুখ হিসেবেই চিনে থাকি। কিন্তু যদি বলা হয়, এগুলোর বেশিরভাগই আসলে কোনো রোগ নয়, বরং শরীর নিজেকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করার একটি প্রাকৃতিক প্রচেষ্টা? চলুন, বিষয়টি গভীরভাবে জেনে নেওয়া যাক।
‘রোগ’ নয়, ‘টক্সিসিটি ক্রাইসিস’
আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন জমা হতে থাকে। যখন এই টক্সিনের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়, তখন শরীর আর সহ্য করতে পারে না। এই অবস্থাকে বলা হয় ‘টক্সিসিটি ক্রাইসিস’ (Toxicity Crisis) বা বিষাক্ততার সংকট। এই সংকটের মুহূর্তে শরীর জমে থাকা টক্সিনগুলো বের করে দেওয়ার জন্য একটি পথ খুঁজতে শুরু করে।
এই সময়ে শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন—মাথাব্যথা, সর্দি, ইনফেকশন, জয়েন্ট পেইন বা ত্বকের সমস্যা, সেগুলো মূলত নির্দেশ করে যে আপনার শরীর বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এটিই হলো ‘ডিজিজ ফেজ’ বা অসুস্থতার পর্ব। এই সময়ে ভয় না পেয়ে বা আতঙ্কিত না হয়ে শরীরের এই নিরাময় প্রক্রিয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত।
অসুস্থতা থেকে নিরাময়: দুটি প্রাকৃতিক ধাপ
শরীরের এই বিষমুক্ত করার প্রক্রিয়াটি দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়:
১. ডিজিজ ফেজ (অসুস্থতার পর্ব): এই পর্বে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং জমে থাকা টক্সিন বের করার জন্য কাজ শুরু করে। ফলে আমরা নানা রকম উপসর্গ বা লক্ষণ অনুভব করি।
২. হিলিং ফেজ (নিরাময়ের পর্ব): যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সফলভাবে টক্সিনের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারে, তখন উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে চলে যেতে শুরু করে। শরীর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এটাই হলো নিরাময়ের পর্ব।
কাজেই, আপনার শরীরের নিজস্ব গতি এবং ব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস রাখাটা জরুরি। কনজিউমার ক্যাপিটালাইজমের তৈরি করা মেডিকেল ব্যবস্থা যেগুলোকে ‘রোগ’ বলে চিহ্নিত করে, তার প্রায় ৮০ ভাগই শরীর নিজে থেকেই সারিয়ে তুলতে সক্ষম। শুধু প্রয়োজন ধৈর্য, ইতিবাচক মনোভাব এবং শরীরকে তার কাজ করতে দেওয়া।
আধুনিক চিকিৎসা কি প্রাকৃতিক নিরাময়ে বাধা দিচ্ছে?
অনেক সময় আমরা অধৈর্য হয়ে দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য কমার্শিয়াল মেডিকেল ট্রিটমেন্ট বা ঔষধের আশ্রয় নিই। এর সবচেয়ে বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো, এটি শরীরের স্বাভাবিক নিরাময় চক্রকে (ডিজিজ ফেজ ও হিলিং ফেজ) সম্পন্ন হতে বাধা দেয়। ফলে মূল সমস্যাটি সাময়িকভাবে চাপা পড়ে যায়, কিন্তু ভেতর থেকে পুরোপুরি সারে না।
বিখ্যাত চিকিৎসক হেনরি লিন্ডলারের একটি কথা এখানে খুবই প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেছেন, ‘প্রায় সমস্ত ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ সৃষ্টি হয়, ড্রাগ বা ঔষধ দিয়ে সাধারণ রোগকে দমন করার ফলে।’
উদাহরণস্বরূপ, যদি সাধারণ সর্দিকে ঔষধ দিয়ে দমন করা হয়, তবে তা পরবর্তীতে ক্রনিক ক্যাটার বা দীর্ঘস্থায়ী শ্লেষ্মায় পরিণত হতে পারে। এরপরও যদি শরীরের নিরাময় প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়া হয়, তবে তা নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক রূপ নিতে পারে। একইভাবে, দমন করা মাইগ্রেন থেকে মানসিক সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ থেকে হার্ট অ্যাটাক এবং পেটের সাধারণ সমস্যা থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
সুতরাং, পরেরবার যখন শরীরে কোনো উপসর্গ দেখা দেবে, তখন আতঙ্কিত না হয়ে ভাবুন—হয়তো আপনার শরীর নিজেকে রক্ষা করার জন্যই এই সংকেত দিচ্ছে। শরীরকে তার স্বাভাবিক কাজটি করতে দিন এবং তার প্রাকৃতিক নিরাময় ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখুন।

Comments

0 total

Be the first to comment.

No related posts.

More from this User

View all posts by admin
আয়ুর্বেদে কলা: প্রজনন ক্ষমতা ও যৌনশক্তি বৃদ্ধিকারী মহৌষধ সম্পূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ হার্বাল মেডিসিন

আয়ুর্বেদে কলা: প্রজনন ক্ষমতা ও যৌনশক্তি বৃদ্ধিকারী মহৌষধ সম্পূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ

কলা আমাদের কাছে অতি সাধারণ এবং সহজলভ্য একটি ফল। কিন্তু আপনি কি জানেন, প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এই...

Sep 11, 2025
আপনি অসুস্থ নন, আপনি তৃষ্ণার্ত! – এক ডাক্তারের যুগান্তকারী আবিষ্কারের গল্প কর্পোরেট কনট্রোল ও নীতি

আপনি অসুস্থ নন, আপনি তৃষ্ণার্ত! – এক ডাক্তারের যুগান্তকারী আবিষ্কারের গল্প

যদি আপনাকে বলা হয়, আপনার বহুদিনের পুরোনো ব্যথা, অ্যাসিডিটি, অ্যাজমা বা উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের মূল...

Sep 11, 2025
ঢেঁকিছাঁটা চালের পুষ্টি ও ঐতিহ্য: আমরা কি হারাতে বসেছি এক অমূল্য সম্পদ? খাদ্য এবং পুষ্টি

ঢেঁকিছাঁটা চালের পুষ্টি ও ঐতিহ্য: আমরা কি হারাতে বসেছি এক অমূল্য সম্পদ?

আজকের প্রজন্মের কাছে ‘ঢেঁকি’ শব্দটি হয়তো শুধু বইয়ের পাতায় বা প্রবাদ-প্রবচনেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু একটা স...

Sep 11, 2025