পাকস্থলী বা পেট আমাদের পরিপাকতন্ত্রের একটি পেশীবহুল অঙ্গ, যা ওপরের পেটের বাম দিকে অবস্থিত। মুখ, খাদ্যনালী, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গ নিয়ে আমাদের পরিপাকতন্ত্র গঠিত।
পাকস্থলী মূলত ৩টি প্রধান কাজ করে: ১. এটি সাময়িকভাবে খাবার সঞ্চয় করে রাখে। ২. পেশী স্তরের সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে খাবারকে মিশ্রিত করে এবং ভেঙে ফেলে। হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এবং পাচক রসের সাহায্যে খাবারকে ঘন, স্যুপের মতো মিশ্রণে (যাকে কাইম বলে) পরিণত করে। ৩. এরপর এই হজম হওয়া খাবারটি ধীরে ধীরে ক্ষুদ্রান্ত্রে পাঠিয়ে দেয়, যেখানে পুষ্টির শোষণ হয়।
সুস্থ পাকস্থলীর গুরুত্ব সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি সুস্থ পাকস্থলী অপরিহার্য। একটি সুস্থ পেট মানে একটি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, উন্নত হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য, ভালো মেজাজ, স্বাস্থ্যকর ঘুম এবং কার্যকর হজম প্রক্রিয়া।
এখানে পাকস্থলী সুস্থ রাখার জন্য ৬টি সহজ টিপস এবং ঘরোয়া প্রতিকার দেওয়া হলো:
পাকস্থলী সুস্থ রাখার ৬টি কার্যকরী উপায়
১. পেট শান্ত রাখতে পান করুন জলজিরা পেটের অস্বস্তির কারণে যখন বমি বমি ভাব হয়, তখন এক গ্লাস জলজিরা পান করা খুবই উপকারী। এটি সাধারণত ভাজা জিরা এবং জোয়ানের গুঁড়োর মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হয়, যা আপনার পাকস্থলীর pH স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং এটিকে স্বাভাবিক করে তোলে। জিরার শক্তিশালী অ্যান্টি-গ্যাস এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য অ্যাসিডিটি ও পেট ফাঁপা উপশম করতেও সাহায্য করে।
২. হজম প্রক্রিয়া মসৃণ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন পাকস্থলীর সঠিক কার্যকারিতার জন্য নিয়মিত পানি পান করা এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ রাখে। সম্ভব হলে তামার পাত্রে রাখা জল পান করার চেষ্টা করুন। গবেষণা অনুযায়ী, তামার পাত্রে কমপক্ষে আট ঘণ্টা ধরে রাখা পানি পান করলে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং হজমে সহায়তা করতে পারে। তামার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য পেটকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৩. খাওয়ার পরেই উপুড় হয়ে শোবেন না রাতের খাবার খাওয়ার পর অন্তত এক ঘণ্টা সক্রিয় থাকার চেষ্টা করুন। খাওয়ার পরপরই উপুড় হয়ে শোয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি আপনার শরীরের ওজন পাকস্থলীর উপর চাপিয়ে দিয়ে হজম প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে বুক জ্বালাপোড়া (অ্যাসিড রিফ্লাক্স) বা GERD-এর মতো সমস্যা হতে পারে। তাই খাওয়ার পরপরই শুয়ে না পড়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৪. সুষম খাবারের জন্য আয়ুর্বেদের 'ষড়রস' অনুসরণ করুন আয়ুর্বেদিক খাদ্যাভ্যাসের একটি নিয়ম হলো 'ষড়রস', যা আপনার খাদ্যতালিকায় ছয়টি মৌলিক স্বাদ অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেয়। এই ছয়টি স্বাদ হলো—মধুর (মিষ্টি), অম্ল (টক), লবণ (নোনতা), কটু (ঝাল), তিক্ত (তেতো), এবং কষায় (কষা)। এই ছয়টি স্বাদ শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সুস্থ রাখে।
৫. নিয়মিত সময়ে খাবার খান একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী খাবার খেলে আপনার পরিপাকতন্ত্র সঠিক ছন্দে কাজ করে। অনিয়মিতভাবে খাবার খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে, যা থেকে পেটে ব্যথা, অ্যাসিডিটি এবং বদহজম দেখা দেয়।
- সকালের নাস্তা: ঘুম থেকে ওঠার দুই ঘণ্টার মধ্যে সেরে ফেলুন।
- দুপুরের খাবার: দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যে খান, কারণ এই সময়ে হজম ক্ষমতা সর্বোচ্চ থাকে।
- রাতের খাবার: দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারের মধ্যে কমপক্ষে ৪ ঘণ্টার ব্যবধান রাখুন। सूर्याস্তের কাছাকাছি বা spätestens রাত ৮টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নিন।
৬. অতিরিক্ত ঝাল-মশলা এড়িয়ে চলুন অতিরিক্ত মশলাদার খাবারে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকে এবং এটি পাকস্থলীর বিভিন্ন অসুস্থতার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত ঝাল খাবার পাকস্থলীর ভেতরের স্তরকে উত্তেজিত করতে পারে, যার ফলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স, গ্যাস্ট্রাইটিস এবং বদহজম হতে পারে। তাই সবসময় খুব বেশি মশলাদার না করে একটি পুষ্টিকর ও সুষম খাবার বেছে নিন।